“স্বামীর হক বেশি, না কি পিতা-মাতার?”—এ প্রশ্নটি অনেক নারীর মনে ঘোরপাক খায়। সমাজে এ নিয়ে নানা মত ও বিভ্রান্তি থাকলেও ইসলামের ব্যাখ্যা পরিষ্কার। ইসলাম মা-বাবা ও স্বামীর উভয়েরই হক আদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তবে কোন জায়গায় কাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তা নির্ভর করে পরিস্থিতি ও সম্পর্কের ধরন অনুযায়ী।
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও হাদিস বিশারদরা জানান, সেবার ক্ষেত্রে মায়ের অধিকার সবচেয়ে বেশি, এরপর বাবার। অন্যদিকে, আনুগত্য ও শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে স্বামীর অধিকার সবচেয়ে বড়।
✦ সেবার ক্ষেত্রে—মা আগে
সহিহ বুখারির বিখ্যাত একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত: এক সাহাবি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, “আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি হক কার?” রাসুল (সা.) তিনবার বললেন: “তোমার মা।” চতুর্থবার বললেন: “তোমার বাবা।” (সহিহ বুখারি: ৫৯৭১)
এই হাদিস প্রমাণ করে, মানবিক খেদমত বা সেবার ক্ষেত্রেই মা-বাবা বিশেষ করে মায়ের হক সবচেয়ে বেশি।
✦ আনুগত্যের ক্ষেত্রে—স্বামী আগে
অন্যদিকে, দাম্পত্য জীবনে স্বামীর প্রতি স্ত্রীকে যে আনুগত্য করতে বলা হয়েছে, সেটি আরও কড়াভাবে বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন— “আমি যদি কাউকে কাউকে সিজদা করতে আদেশ করতাম, তবে স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীদের সিজদা করার নির্দেশ দিতাম।” (সুনানে আবু দাউদ: ২১৪০)
✦ ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি
ইসলামের বিধান অনুযায়ী, একজন মুমিন নারীর উচিত—
✅ স্বামীর হক যথাযথভাবে আদায় করা ।
✅ এবং মা-বাবাকে কখনো কষ্ট না দেওয়া ।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যতটা ভালো থাকবে, ততটাই শান্তিপূর্ণ হবে সংসারজীবন। আল্লাহ্ তাআলা পুরুষকে পরিবারের পরিচালক বানিয়েছেন, আর স্ত্রীকে তাঁর সহচর। তাই স্বামীর আনুগত্য এবং মা-বাবার খেদমতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই একজন নারীর প্রকৃত দায়িত্ব।
✦ মতবিরোধ হলে করণীয়
যদি কোনো সময় স্বামীর নির্দেশ ও মা-বাবার চাওয়া বিপরীতমুখী হয়, তখন ইসলাম সংসারের শৃঙ্খলা ও আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে বলে। এ সময় বিবেচনা করতে হবে কোনটা দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণকর।
দাম্পত্য জীবনে সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হলে:
-
পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসা থাকা জরুরি
-
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হক আদায়ে সচেষ্ট হবে
-
মনোমালিন্য হলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করতে হবে
ইসলামে মা-বাবা ও স্বামীর উভয়েরই হক রয়েছে। একটিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অপরটিকে অবহেলা করা যাবে না। সঠিক ইসলামি জ্ঞানে বলীয়ান হয়ে দায়িত্বশীলতা ও ভারসাম্যের সঙ্গে চললে জীবন হবে শান্তিময় ও কল্যাণকর।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুসলিম নারী-পুরুষকে হকের ওপর চলার তাওফিক দিন। আমিন।